আমার প্রথম পর্ণ দেখার গল্পটা অন্য সবার মতই৷ ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন। স্কুলে একদিন দেখি পিছনের বেঞ্চে বসে ক্লাসেরই কয়েকটা ছেলে মিলে কী যেন দেখছে। কৌতুহল মেটাতে না পেরে আমিও গেলাম দেখতে। এমপিফোর নামক বস্তুটা তখন বেশ জনপ্রিয়। সেখানে কী একটা মুভি চলছে, দেখে আমার চোক-কান সব লাল হয়ে গেল। বলে না দিলেও বুঝতে পারছেন, ওটাই আমার প্রথম পর্ণ দেখা। এরপর আমি বেশ অনেকবার দেখেছি বেশ আগ্রহ নিয়ে, এমনই ভয়াবহভাবে শুরু হয়েছিল আমার 'সেক্স এডুকেশন'। বলা বাহুল্য, এর আগে আমি আসলেই জানতাম না পুরো প্রক্রিয়াটা কীভাবে ঘটে, কেউ জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি।
পাড়ার এক চাচাকে একবার দেখলাম ফার্মেসিতে আসলেন। একটা কনডম কিনলেন, তখনও আমাকে খেয়াল করেননি। হঠাত আবিষ্কার করলেন আমি পাশে দাড়িয়ে আছি। উনি এমনভাবে হাতটা নিয়ে লুকালেন যেন হাতে কোন ভয়াবহ চোরাই জিনিস, আমি আমি হচ্ছি পুলিশ। প্রকাশ্যে সেক্স নিয়ে কথা বলেছেন তো হয়েছে। আপনি বেয়াদব, ধর্ম মানেন না, আদব-কায়দা নাই, কিন্তু ঐ মুরুব্বিরই হয়ত দশটা বাচ্চা।
সেক্সের মত ইন্টারেস্টিং ট্যাবু বাংলাদেশে নাই। যেখানে সেখানে যত্রতত্র এটা নিয়েই আলাপ, কিন্তু সামনে আসলেই দোষ। স্কুল কলেজে বিভিন্ন আড্ডায় প্রায়ই খেয়াল করতাম একদল ছেলে-ছোকড়ার কথাবার্তার একমাত্র টপিক হচ্ছে সেক্স। অমুক মেয়ে কতটা খারাপ, অমুক ম্যাডাম কতটা স্মার্ট- এটাই তখন হট টপিক। পাশের বাড়ির বারান্দায় প্রতিদিন কয়টা ব্রা শুকাতে দেয়া হয় এটা উকি দিয়ে দেখে বেড়ানো জেনারেশন আর কী নিয়েই বা কথা বলবে?
বাংগালীর সেক্স নিয়ে ট্যাবু ব্যপারটা এতটা ইন্টারেস্টিং যে গুগল বেচারাও বিগড়ে গেছে। সার্চ লিস্টে উদ্দীপক উপাদানের জয়জয়কা। ডাক্তার লিখে সার্চ দিলেও প্রথমেই চলে আসে "দেখুন নার্সের সাথে কী করলো ডাক্তার (ভিডিও সহ)"। কৌতুক, আড্ডায় যেই ছেলেটা সবচেয়ে বেশি নন-ভেজ আনতে পারে সে তত হিট। এক 'লাগানো' শব্দটা নিয়েই যে বাংলার মানুষ কত সাহিত্য রচনা করেছে তার ইয়ত্তা নেই। এরকম আরও আছে- ঢুকানো, খেলা, শোয়া, খেয়ে দেয়া, ঘুমানো, আউট করা ইত্যাদি। অংগভংগির তো অভাব নাই। কেউ নতুন বিয়ে করলেই হল, পরদিন বন্ধু-বান্ধব সবার পচানোর টপিক ঐ একটাই - " কিরে, খুব রাত জাগা হল মনে হচ্ছে? " বাসর রাতে বাইরে থেকে কান পেতে রাখা তো আমাদের আমাদের নাটক-সিনেমার পুরনো দৃশ্য। আমজনতাকে আর কী দোষ দেই? পর্ণ দেখে সেক্স শেখা পার্ভার্ট জাতি শাক-সবজিকেও বাদ দেয় নাই। গাজর, কলা, বেগুন বিষয়ক প্রচুর সস্তা কৌতুক গুগলে সার্চ দিলেই দেখবেন। আমার এক ক্লাসমেটের নাম ছিল সবিতা, সবাই ওকে সবিতা ভাবী বলে ডাকা শুরু করলে ও সেকশন চেঞ্জ করে ফেলে৷ বুঝেন অবস্থা।
কলেজে একদিন সকালে গিয়ে শুনি কোন এক জুনিয়র মেয়ের সেক্স ভিডিও বের হয়েছে। সবার হাতে হাতে সেই ভিডিও৷ ভিডিওটা ছেড়ে দেয়া সেকেন্ড ইয়ারের ছেলেটাকে এরপরও অনেকবার কলেজে বীরদর্পে হাটতে দেখেছি। না বললেও চলে, মেয়েটাকে আর একদিনও দেখি নাই। একদিন এক ফ্রেন্ড দৌড়ে এসে বললো দোস্ত চল ধানমন্ডি লেকে যাই, কাপলরা চিপায় বসে চুম্মাচাটি করে, গিয়া ডিস্টার্ব করুম। আমি হা করে চেয়ে ছিলাম, ঐ ছেলেটাই হয়ত বলতে পারত চল ভিকারুননিসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইভ টিজারদের গিয়ে ডিস্টার্ব করি৷ আমি পড়তাম রাইফেলস পাবলিকে। বৃষ্টি হলেই দেখতাম একদল ছেলে সিটি কলেজের সামনে চলে যেত, কারণ সিটি কলেজের মেয়েদের জামার রঙ সাদা, বৃষ্টিতে কেউ ভিজলেই চামড়া ভিজিবল হয়ে যাবে আর এই বীরপুরুষেরা গোগ্রাসে চোখ দিয়ে গিলবে। এই দেশে কাধের কাছে জামার ফাক দিয়ে ব্রা এর স্ট্রিপ বের হয়ে থাকলে সেটা হাসাহাসির বিষয়, ওড়না একটু বুক থেকে সড়ে গেলে সেটা আলোচনার বিষয়, জামাটা একটু ট্রান্সপারেন্ট হয়ে একটু চামড়া বুঝা গেলে সেটা আলোচনার বিষয়।
কাজেই এই বাংলাদেশে যখন নয় মাসের বাচ্চাকে রেইপ করা হয়, আমি তখন অবাক হই না। সারাক্ষণ লাগায় বেড়ানো আর খেয়ে ছেড়ে দেয়া আস্তো জেনারেশনকে যখন সেক্স এডুকেশন দিতে গেলে লাখে লাখে 'ধর্মপ্রাণ' মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, তাদের সহজেই ধর্ম নাশ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে হলেও এগুলা সহ্য করে যাওয়াই শ্রেয়। কিংবা কোন বিধর্মী দেশে গিয়েও শান্তি খুজতে পারেন
#collected

Comments