তিথিকে
দেখতে এসেছে। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। এটা শুনেই বাসার সবার মাথা এলোমেলো হয়ে
গেছে। আরও বড় ব্যাপার হলো ছেলে কেবল আমেরিকা থেকে ঘুরে এসেছে। যদিও
প্রতিযোগীদের না নিয়ে গিয়ে নিজেরা ধন্যবাদ দিয়ে এসেছে। তবুও তো আমেরিকা
ফেরত।
এদিকে মেয়ের মায়ের মাথা নষ্ট নষ্ট অবস্থা। এক ফাঁকে সে মেয়ের বাবাকে মানে নিজের স্বামীকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেই ফেললো, এই শোনোনা, আমার ব্যাপারটা একটু দেখো!
এই কথা শুনে মেয়ের বাবার লুঙ্গি কাঁধে উঠে গেলো। তিনি লুঙ্গি নামিয়ে পাজামা পড়লেন, ফিতা বাঁধলেন। তারপর স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বোঝালেন, দেখো তিথির মা। তোমার তো বয়স হয়েছে। সবকিছুর তো একটা সময় আছে। তাছাড়া তিথি কী ভাববে।
তিথির মা বললেন, আমি অতকিছু জানি না। আমার চাই ই চাই।
তিথির বাবা লজ্জার মত পেয়ে বললেন, এই ছেলেকেই? তোমার জন্য?
তিথির মা বললেন, আরে হাদারাম! তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি আগে কী বলেছিলাম মনে নেই? বিয়ের কার্ডে ছেলে যে বিসিএস ক্যাডার এটা লিখবা, গায়ের হলুদের পোস্টারেও লিখবা। লিখবা, 'তিথির বিসিএস হলুদ"। তারপর যে গরু কিনে আনবা সেটার গলায়ও বিসিএস জামাই লেখা মালা ঝুলিয়ে রাখবা।
তিথির বাবা বললেনল, ও, এই কথা। ভালো প্রস্তাব। আমার তো আরও প্ল্যান আছে। ডেকোরেশনে অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। ওরা সব চেয়ারে কাঁচা রঙ দিয়ে বিসিএস লিখে দেবে। সবাই খাওয়ার পর যখন উঠবে তখন সবার পাছায় বিসিএস লেখা ছাপ্পা লেগে থাকবে। তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও সবাই বুঝবে বিসিএস ক্যাডারের বিয়ে খেয়ে ফিরছে।
এদিকে তিথি আর তার হবু জামাইকে একা একা আড়ালে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। পাত্রপক্ষের কেউ অবশ্য বলতে চায়নি এভাবে। মেয়েপক্ষ জোর করে এভাবে তাদের আড়ালে পাঠিয়ে দিয়েছে।
তিথির মেজো খালা সকাল থেকে দুবার ফিট হয়েছেন। পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানো হলো। তিনি বললেন, এই সুযোগে বাসর রাতটাও করায়া ফেলি চলো। স্যরি স্যরি, বাসর রাত না। এখন তো দিন। বাসর দিন হবে। এই কে কোথায় আছিস, দরজা জানালা লাগা। লো ভলিউমে তেরি জিসম টু সিনেমার গান লাগা।
তিথির ছোট খালা এসে বললেন, আপা, আমিও একটু করতে চাই। কোনোদিন বিসিএস ক্যাডারের সাথে করি নাই।
মেজো খালা বললেন, সব জায়গায় খাম খাম করবি না। স্বভাব চরিত্র ভালো কর।
কথা শুনে ছুটে এলো ছোট খালার হাবিও। সে একটু চাপ দিতেই সব বের হয়ে গেলো। মানে ছোট খালা জামাইয়ের সামনে বললো, আমি গল্প করার কথা বলছি। তিথির মত করে বারান্দায় দাঁড়ায়ে একটু গল্প করবো। ছেলের খোঁজ খবর নেবো।
এক ফাঁকে বাড়ির ছোট ছেলে পাত্রের ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে বের করলো। বরের টাইমলাইন আলহামদুলিল্লাহ অমক তমক তম বিসিএস লেখা স্ট্যাটাস দিয়ে ভরা।
এটা দেখে তিথির বাবা বললেন, মাশা আল্লাহ! ছেলে অত্যন্ত ধার্মিক। একদম আদর্শ জামাই।
এদিকে বিয়ের ডেট হলো। তিথিদের বাড়িতে ধুমধাম লেগে গেলো। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার এনে বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে বিসিএস বিসিএস ডিজাইন ছড়িয়ে দেয়া হলো। তিথির বিয়ের শাড়িতে বিসিএস লেখার জায়গা খুঁজে না পেয়ে ব্লাউজে লেখা হলো।
বিয়ের গেট সহ পুরো বাড়িতে ৩৭ তম, ৩৮ তম, আলহামদুলিল্লাহ্, প্রিলি, ভাইভা, সুপারিশকৃত এসব কোড ওয়ার্ড কর্কশিট কেটে লাগানো হলো।
লাইটিং করা হলো।
তারপর তিথির বিয়ে হয়ে গেলো। বাড়ির সবাই হাসতে হাসতে তিথিকে বিদায় দিলো কিন্তু তিথি বিয়ের পরদিনই কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলো। এসেই ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে দিলো। নক করলেও আর দরজা খুললো না। সবাই মিলে দরজা ভেঙে ফেললো।
কেন এভাবে ফিরে এসেছে এসব জিজ্ঞাসা করলো।
তিথি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, তোমরা আমাকে কার হাতে তুলে দিলে?
তিথির মা বললেন, কেন? বিসিএস ক্যাডারের হাতে।
তিথি বললো, আমি আর ফিরে যাবো না।
এ কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো কিন্তু তিথির ছোট বোন মিথি খুব খুশি হলো।
সে বললো, আপা যদি না যায় তাহলে আপার বদলে আমি যাই?
এই কথা বলার সাথে সাথেই মায়ের বন চটকানা খেয়ে সে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে গেলো।
তিথির বড় দুলাভাই এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো, কী সমস্যা? বিচি তিনটা? ওটা তো সব বিসিএস ক্যাডারদেরই থাকে।
তিথি এবার লজ্জায় মুখ খুললো। বললো, ছেলের সবই ঠিক আছে। কিন্তু বিসিএসের ভাষায় কথা বলে।
সবাই আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কেমন? কীভাবে?
রুম থেকে ছোট ছেলেমেয়েদের বের করে দেয়া হলো।
তারপর তিথি বললো, বাসর ঘরে ঢুকছি। মুখ থেকে ঘোমটা সরাইছে। তারপর শাড়ির আঁচলটা ফেলে দিছে। এরপর আস্তে আস্তে আমার কানে কাছে কিছু বলতে আসলো। আমি তো কাঁপতেছি। ইমোশনাল হয়ে খুব ভালোবাসার কথা শোনার জন্য ওয়েট করতেছিলাম। কিন্তু সে কানের কাছে এসে কানে কানে বললো, আলহামদুলিল্লাহ! প্রথম বাসর রাত। প্রিলি ডান...
কার্টেসি: তানভির মেহেদি
এদিকে মেয়ের মায়ের মাথা নষ্ট নষ্ট অবস্থা। এক ফাঁকে সে মেয়ের বাবাকে মানে নিজের স্বামীকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেই ফেললো, এই শোনোনা, আমার ব্যাপারটা একটু দেখো!
এই কথা শুনে মেয়ের বাবার লুঙ্গি কাঁধে উঠে গেলো। তিনি লুঙ্গি নামিয়ে পাজামা পড়লেন, ফিতা বাঁধলেন। তারপর স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বোঝালেন, দেখো তিথির মা। তোমার তো বয়স হয়েছে। সবকিছুর তো একটা সময় আছে। তাছাড়া তিথি কী ভাববে।
তিথির মা বললেন, আমি অতকিছু জানি না। আমার চাই ই চাই।
তিথির বাবা লজ্জার মত পেয়ে বললেন, এই ছেলেকেই? তোমার জন্য?
তিথির মা বললেন, আরে হাদারাম! তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি আগে কী বলেছিলাম মনে নেই? বিয়ের কার্ডে ছেলে যে বিসিএস ক্যাডার এটা লিখবা, গায়ের হলুদের পোস্টারেও লিখবা। লিখবা, 'তিথির বিসিএস হলুদ"। তারপর যে গরু কিনে আনবা সেটার গলায়ও বিসিএস জামাই লেখা মালা ঝুলিয়ে রাখবা।
তিথির বাবা বললেনল, ও, এই কথা। ভালো প্রস্তাব। আমার তো আরও প্ল্যান আছে। ডেকোরেশনে অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। ওরা সব চেয়ারে কাঁচা রঙ দিয়ে বিসিএস লিখে দেবে। সবাই খাওয়ার পর যখন উঠবে তখন সবার পাছায় বিসিএস লেখা ছাপ্পা লেগে থাকবে। তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও সবাই বুঝবে বিসিএস ক্যাডারের বিয়ে খেয়ে ফিরছে।
এদিকে তিথি আর তার হবু জামাইকে একা একা আড়ালে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। পাত্রপক্ষের কেউ অবশ্য বলতে চায়নি এভাবে। মেয়েপক্ষ জোর করে এভাবে তাদের আড়ালে পাঠিয়ে দিয়েছে।
তিথির মেজো খালা সকাল থেকে দুবার ফিট হয়েছেন। পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানো হলো। তিনি বললেন, এই সুযোগে বাসর রাতটাও করায়া ফেলি চলো। স্যরি স্যরি, বাসর রাত না। এখন তো দিন। বাসর দিন হবে। এই কে কোথায় আছিস, দরজা জানালা লাগা। লো ভলিউমে তেরি জিসম টু সিনেমার গান লাগা।
তিথির ছোট খালা এসে বললেন, আপা, আমিও একটু করতে চাই। কোনোদিন বিসিএস ক্যাডারের সাথে করি নাই।
মেজো খালা বললেন, সব জায়গায় খাম খাম করবি না। স্বভাব চরিত্র ভালো কর।
কথা শুনে ছুটে এলো ছোট খালার হাবিও। সে একটু চাপ দিতেই সব বের হয়ে গেলো। মানে ছোট খালা জামাইয়ের সামনে বললো, আমি গল্প করার কথা বলছি। তিথির মত করে বারান্দায় দাঁড়ায়ে একটু গল্প করবো। ছেলের খোঁজ খবর নেবো।
এক ফাঁকে বাড়ির ছোট ছেলে পাত্রের ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে বের করলো। বরের টাইমলাইন আলহামদুলিল্লাহ অমক তমক তম বিসিএস লেখা স্ট্যাটাস দিয়ে ভরা।
এটা দেখে তিথির বাবা বললেন, মাশা আল্লাহ! ছেলে অত্যন্ত ধার্মিক। একদম আদর্শ জামাই।
এদিকে বিয়ের ডেট হলো। তিথিদের বাড়িতে ধুমধাম লেগে গেলো। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার এনে বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে বিসিএস বিসিএস ডিজাইন ছড়িয়ে দেয়া হলো। তিথির বিয়ের শাড়িতে বিসিএস লেখার জায়গা খুঁজে না পেয়ে ব্লাউজে লেখা হলো।
বিয়ের গেট সহ পুরো বাড়িতে ৩৭ তম, ৩৮ তম, আলহামদুলিল্লাহ্, প্রিলি, ভাইভা, সুপারিশকৃত এসব কোড ওয়ার্ড কর্কশিট কেটে লাগানো হলো।
লাইটিং করা হলো।
তারপর তিথির বিয়ে হয়ে গেলো। বাড়ির সবাই হাসতে হাসতে তিথিকে বিদায় দিলো কিন্তু তিথি বিয়ের পরদিনই কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলো। এসেই ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে দিলো। নক করলেও আর দরজা খুললো না। সবাই মিলে দরজা ভেঙে ফেললো।
কেন এভাবে ফিরে এসেছে এসব জিজ্ঞাসা করলো।
তিথি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, তোমরা আমাকে কার হাতে তুলে দিলে?
তিথির মা বললেন, কেন? বিসিএস ক্যাডারের হাতে।
তিথি বললো, আমি আর ফিরে যাবো না।
এ কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো কিন্তু তিথির ছোট বোন মিথি খুব খুশি হলো।
সে বললো, আপা যদি না যায় তাহলে আপার বদলে আমি যাই?
এই কথা বলার সাথে সাথেই মায়ের বন চটকানা খেয়ে সে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে গেলো।
তিথির বড় দুলাভাই এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো, কী সমস্যা? বিচি তিনটা? ওটা তো সব বিসিএস ক্যাডারদেরই থাকে।
তিথি এবার লজ্জায় মুখ খুললো। বললো, ছেলের সবই ঠিক আছে। কিন্তু বিসিএসের ভাষায় কথা বলে।
সবাই আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কেমন? কীভাবে?
রুম থেকে ছোট ছেলেমেয়েদের বের করে দেয়া হলো।
তারপর তিথি বললো, বাসর ঘরে ঢুকছি। মুখ থেকে ঘোমটা সরাইছে। তারপর শাড়ির আঁচলটা ফেলে দিছে। এরপর আস্তে আস্তে আমার কানে কাছে কিছু বলতে আসলো। আমি তো কাঁপতেছি। ইমোশনাল হয়ে খুব ভালোবাসার কথা শোনার জন্য ওয়েট করতেছিলাম। কিন্তু সে কানের কাছে এসে কানে কানে বললো, আলহামদুলিল্লাহ! প্রথম বাসর রাত। প্রিলি ডান...
কার্টেসি: তানভির মেহেদি
Comments
Post a Comment